ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৩/০২/২০২৫ ৯:২৩ পিএম , আপডেট: ১৩/০২/২০২৫ ৯:২৪ পিএম

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার পাহাড় কেন্দ্রিক অপহরণ চক্রের আলোচিত নাম আবুল আলম ও শাহ আলম নামের দুই সহোদর। তারা এখন সীমান্ত জনপদের মানুষের কাছে মূর্তিমান আতংক। মূলত সীমান্ত লাগোয়া এলাকার পাহাড় কেন্দ্রিক গড়ে তোলা বাহিনীর সদস্যরাই নিয়ন্ত্রণ করছে মাদকপাচার, অস্ত্রপাচার, মানবপাচার ও অপহরণসহ নানা অপরাধকর্ম।

তারা টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালিস্থ গাজীপাড়া গ্রামের আবদুল মজিদ ওরফে ভোলাইয়া বদ্দ্যের ছেলে। এদের মধ্যে আবুল আলম (৪২) এর বিরুদ্ধে অস্ত্র, অপহরণ, মানবপাচার মাদক সহ নানা আইনে রয়েছে ৩০টির বেশি মামলা এবং শাহ আলম (৩৬) এর বিরুদ্ধে একই ধরনের অপরাধের ২৮টির বেশি মামলা রয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, দুই ভাইয়ের গড়ে তোলা বাহিনীর সদস্যরা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে টেকনাফের বিভিন্ন পাহাড় কেন্দ্রিক ডাকাতি ও অপহরণসহ মুক্তিপণ আদায়, নির্যাতন সহ নানা অপরাধ করে আসছে। যে কারণে একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া দুই ভাই অপহরণ চক্রের মুলহোতা হিসেবে পুলিশের তালিকাভুক্তও। বিগত সরকারের আমলে তারা স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির কাছের মানুষ হিসেবে প্রভাব বিস্তার করলেও ক্ষমতার পালা বদলের সাথে সাথে তারা এখন বনে গেছেন বিএনপি নেতাও।

অপহরণ চক্রের প্রধান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া শাহ আলম বাদী হয়ে এবার টেকনাফ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। গত ১০ ফেব্রুয়ারি দায়ের করার মামলাটির ঘটনার তারিখ দেখানো হয়েছে বিগত ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালিন সময়।  

টেকনাফের রঙ্গীখালিস্থ গাজিপাড়ায় ধানের শীর্ষ প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা ভাংচুর ও মারধরে আহত করার ঘটনায় এই মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার এজাহারে ৪৭ জনের উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৫০-৬০ জনকে।  

মামলার বাদী এজাহারে নিজের রাজনৈতিক পরিচয়ে বলেছেন, তিনি ২০১৮ সালে টেকনাফ উপজেলা শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের সিনিয়র সহসভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি হ্নীলা ইউনিয়ন বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক।

দীর্ঘ ৭ বছর আগের ঘটনায় দায়ের করা মামলাটিতে র্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত যুবলীগের আলোচিত নেতা ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের ভাই সাবেক কাউন্সিলর এহতেশামুল হক বাহাদুরকে ৩৯ নম্বর আসামি করা হয়েছে। যদিও ঘটনাস্থল থেকে এহতেশামুল হক বাহাদুরের নিজস্ব বাড়ি অনুমানিক ২৮কিলোমিটার দূরের উপজেলা সদরে।
 
বিগত ২০১৮ সালের ২৬ মে রাতে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নোয়াখালী পাড়ায় মাদকবিরোধী অভিযানে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন তিন বারের পৌর কাউন্সিলর, উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সদস্য ও টেকনাফ যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল।  

ওই বছরের ৩১ মে কক্সবাজারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একরামুল হকের স্ত্রী আয়েশা এ হত্যাকাণ্ডকে ‘ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত খুন’ উল্লেখ করে ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন। ওইদিন ‘ক্রসফায়ার’ এর সময় একরামুল হকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে ধারণকৃত কথোপকথনের কিছু অডিও ক্লিপ তিনি সাংবাদিকদের দিয়েছিলেন। যা শুনে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

একরামুল হকের ভাই এহতেশামুল হক বাহাদুর জানিয়েছেন, তার ভাইকে হত্যার পর পুরো পরিবার মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন। আর তার রেশ এখনও রয়ে গেছে। ভাইয়ের মৃত্যুর মাত্র ৭ মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর রঙ্গীখালি এলাকায় কি হয়েছিল এখন মনে নেই। ওখানে ওই সময় যাওয়া বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেয়ার পরিস্থিতি পরিবারের কারও ছিল না। কেন ভিন্ন একটি স্থানের ঘটনায় তাকে আসামি করা হল তিনি নিজেও জানেন না।  

দীর্ঘদিন আগে সংঘটিত কথিত ঘটনায় দায়ের মামলায় আসামি করার বিষয়টিকে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন তিনি।

একই মামলায় টেকনাফের হ্নীলার একজন স্থানীয় সাংবাদিক ফরিদুল আলম, টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী নুর কায়েস ও মো. আব্দুল আজিজের পাশাপাশি টেকনাফ সদর ও সাবরাংসহ বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষকে আসামি করারও অভিযোগ উঠেছে।

একাধিক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, টেকনাফের পাহাড় কেন্দ্রিক অপহরণ চক্রের একটির বাহিনী প্রধান শাহ আলম’কে টেকনাফ থানার পুলিশ সর্বশেষ গ্রেপ্তার করেছিল ২০২৪ সালের ৩০ মার্চ।

তখন থেকে টেকনাফ থানার ওসি হিসেবে কর্মরত আছেন মুহাম্মদ ওসমান গণি।

ওই সময় তিনি জানিয়েছিলেন, “ টেকনাফের পাহাড় কেন্দ্রিক অপহরণ চক্রের একটি বাহিনী প্রধান শাহ আলম। জিজ্ঞাসাবাদে শাহ আলম জানিয়েছে, রঙ্গীখালী এলাকা সংলগ্ন গহীন পাহাড়ে ৪০/৫০ জনের সংঘবদ্ধ একটি অপহরণ চক্র গড়ে তুলে সাম্প্রতিক অপহরণগুলোর মূল ভূমিকায় ছিলেন তিনি। তার নেতৃত্বে গহীন পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। “

ওই মামলা গ্রেপ্তারের কিছুদিন পর জামিনে বের হয় শাহ আলম। এরপরও একাধিক অপহরণের ঘটনায় অভিযুক্ত হলেও ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে নিজকে বিএনপি পরিচয় দিতে মরিয়া হয়ে উঠেন দুই ভাই। একের পর এক বিএনপির সভা-সমাবেশে অংশ নেয়ার পাশাপাশি নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। এমন কি তারা দুই ভাইকে বিএনপির বিভিন্ন সভা-সমাবেশের মঞ্চেও দেখা মিলেছে শীর্ষ নেতাদের সাথে। যার ছবি নিজেইরা প্রচার করছেন নিজেদের মতো। এর মধ্যে গত ১০ ফেব্রুয়ারি মামলাটি দায়ের করেন শাহ আলম।

অথচ এই শাহ আলম বর্তমানে অপহরণের ঘটনায় দায়ের করা ৫টি মামলার গ্রেপ্তারী পরোয়ানাভূক্ত আসামি। তিনি কিভাবে থানায় গিয়ে মামলার বাদী হলেন- এমন প্রশ্ন করেছেন তার দায়ের মামলাটির আসামী স্থানীয় সাংবাদিক ফরিদুল আলম।

শাহ আলমের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও সকল মামলায় জামিন রয়েছে এবং কোন মামলায় গ্রেপ্তারী পরোয়ানা থাকার বিষয়টি জানা নেই বলে জানিয়েছেন ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি জানান, নিহত সাবেক পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের ভাই সাবেক কাউন্সিলর এহতেশামুল হক বাহাদুর সহ অন্যান্য জনকে আসামির বিষয়টি বাদির বিষয়। বাদি যেভাবে এজাহার দিয়েছে ওই ভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এব্যাপারে তদন্ত করে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহ জাহান চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি নিয়ে টেকনাফ উপজেলা সভাপতির সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট হাসান সিদ্দিকী জানান, শাহ আলমের পরিবার বিএনপি রাজনীতির সাথে আগে থেকে জড়িত বলে নানাভাবে তাদের উপর ষড়যন্ত্র ও নির্যাতন নিপীড়ন হয়েছে। ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবরে তাদের দুই ভাইকে হত্যাও করা হয়েছে। তারা অপরাধি না। অপরাধি করা হয়েছে।

নিহত সাবেক পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের ভাইকে আসামি করার বিষয়টি পুলিশকে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পাঠকের মতামত

চাকরি দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড কনসার্ন বাংলাদেশে

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড কনসার্ন বাংলাদেশে জনবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি ঢাকায় কান্ট্রি অফিসে ...

মিয়ানমারের ‘স্ক্যাম সেন্টার’ থেকে বেঁচে ফেরা বাংলাদেশি ফয়সালের করুণ অভিজ্ঞতা

মাত্র ২১ বছর বয়স বাংলাদেশি নাগরিক ফয়সালের। সম্প্রতি মিয়ানমারের একটি স্ক্যাম সেন্টার থেকে উদ্ধার করে ...